অলিভ অয়েল এর ব্যাপারে প্রশ্ন আসলে প্রথম যে প্রশ্ন মাথায় আসে তা হল “অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা কি”! অলিভ অয়েল বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন- হৃদরোগ, ক্যান্সার, হজমে সমস্যা, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস এবং আলঝেইমার এর মত রোগের উপকার করে থাকে। এখানে আজ আমরা সংক্ষিপ্ত আকারে অলিভ অয়েলের উপকারিতা গুলো পয়েন্ট আকারে জানবো।
অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা কি?
বাংলায় অলিভ অয়েলকে ‘জৈতুন এর তেল‘ বলা হয়। এটি রান্নার কাজে, সালাদ তৈরির কাজে বহুল ব্যবহৃত উদ্ভিজ্জ তেল। অলিভ অয়েল সাবান তৈরিতে, প্রসাধনী তৈরিতে, ওষুধ এবং বাতি জ্বালানোর জন্যও ব্যবহৃত হয়। অলিভ অয়েল উজ্জ্বল হলুদ বা সবুজ অথবা সোনালি রঙের তীব্র সুগন্ধি যুক্ত এবং সামান্য তিক্ত স্বাদের হয়ে থাকে। নিচে অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা গুলো তুলে ধরা হল-

- হার্টের রোগে অলিভ অয়েলের উপকারিতা অনেক। অলিভ অয়েলকে অনেক কারণে হার্টের জন্যে স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয়। প্রতিদিন ৪+ টেবিল চামচ অতিরিক্ত ভার্জিন অলিভ অয়েল খেলে হার্টের রোগ হওয়ার ঝুঁকি কম যাবে। এবং তাদের হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং হার্ট থেকে মৃত্যুর সম্মিলিত ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যাবে।
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে অলিভ অয়েল বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। যদিও ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য কোন খাবারই ম্যাজিকের মত কাজ করে না, তারপর অলিভ অয়েলের ব্যবহার ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলিতে ক্যান্সারের হার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো। একটি সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফলে এসেছে যে অতিরিক্ত ভার্জিন অলিভ অয়েল অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াতে পরিবর্তন আনে যা কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধের সাথে যুক্ত; এবং পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে সব মহিলারা সবচেয়ে বেশি অলিভ অয়েল খান তাদের কোলন ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।
- অলিভ অয়েল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হরমোন আলঝাইমার রোগ সহ নিউরো-ডিজেনারেটিভ রোগের অগ্রগতিতে জড়িত। কিন্তু অতিরিক্ত ভার্জিন অলিভ অয়েলের পলিফেনল-বিশেষ করে ওলিওক্যানথাল-শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে যা এই হরমোনকে মোকাবেলায় সাহায্য করতে পারে। বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন যে, ওলিওক্যানথাল সমৃদ্ধ অলিভ অয়েল তেল মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহের কাজকে পুনরুদ্ধার করে নিউরো-প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে যা আলঝেইমারের অগ্রগতি ধীর করে দিতে পারে।
- ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে অলিভ অয়েলের উপকারিতা অনস্বীকার্য। আপনি যদি আর্থ্রাইটিস বা অন্য কোনো দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগে ভুগে থাকেন তবে অলিভ অয়েল আপনার ডায়েটে একটি বিশেষ সংযোজন হতে পারে। সাধারণত মনোস্যাচুরেটেড চর্বি সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগের প্রদাহের জন্য দায়ী। গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে অলিভ অয়েলের সেবন এর মাত্রা অনেকটাই কমিয়ে দেয়। ফলে প্রদাহ অনেকাংশেই কমে যায়! অতিরিক্ত ভার্জিন অলিভ অয়েলে পলিফেনল ওলিওক্যানথালও রয়েছে, যা আইবুপ্রোফেনের মতো প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। কিছু বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে ওলিওক্যানথাল যুক্ত খাবার নিয়মিত গ্রহণ করলে প্রদাহজনিত রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
- অলিভ অয়েল রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখে এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- বিজ্ঞানীরা একটি সমীক্ষায় দেখেছেন যে, যারা সবচেয়ে বেশি অলিভ অয়েল খেয়েছিল তাদের ফাস্টিং ব্লাড সুগার কম ছিল এবং ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ১৬% কম ছিল। সাধারণত ফ্যাট রক্তে গ্লুকোজ অ্যাবসোরপসোনের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করাকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে। তবে বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন যে অলিভ অয়েলের প্রধান মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ওলিক অ্যাসিড, ইনসুলিন রেসিস্টেন্ট প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও অলিভ অয়েল খুব ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে, ত্বকের তারুণ্যতা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম
নিচে অলিভ অয়েল ব্যবহারের সহজ টিপস দেয়া হল:
- প্রথমে কুঁচি কুঁচি করে সালাদ কেটে নিন
- সালাদের সাথে অলিভ অয়েল মাখিয়ে নিন
- আপনার পছন্দের ফ্রেশ রুটি উপর সালাদটি নিন
- তারপর খেয়ে নিন
এছাড়াও আপনি চাইলে ভিন্ন ভাবেও অলিভ অয়েল খেতে পারেন। কখনো খাওয়ার জন্য, আবার কখনোবা ত্বকের সুরুক্ষায় অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
Related Articles অলিভ অয়েল সম্পর্কে আপনি যা শুনেছেন তা ভুলও হতে পারে |