ইসলামে বিয়ের বয়স কত? সম্ভবত আমাদের খুব কিছু প্রশ্ন গুলোর মধ্যে এটি একটি! আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানবো ইসলামে আসলেই বিয়ের বয়স কত!
অধিকাংশ মুসলমান বিশ্বাস করে যে বিয়ে জীবনের একটি মৌলিক জিনিস এবং এর প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত ব্যাপক। বিয়ে হল একজন পুরুষ এবং মহিলার মধ্যে স্বামী -স্ত্রী হিসেবে একসাথে বসবাসের চুক্তি। এই চুক্তিকে আরবিতে নিকাহ বলে।
তাছাড়া অধিকাংশ ধর্মই পারিবারিক জীবনকে গুরুত্বপূর্ন বলে মনে করে এবং দাম্পত্য জীবনের স্থায়িত্বকে যথেষ্ট মূল্য দেয়।
বয়স নিয়ে কিছু কথা
আমরা প্রায় সকলেই একটা শব্দের সাথে পরিচিত। আর তা হল বয়ঃসন্ধি। বয়ঃসন্ধি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যা বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন বয়সে ঘটে।
বিশ্বব্যাপী মানব আচরণের উপর করা গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যেসব মেয়েরা এবং ছেলেরা পৃথিবীর উষ্ণ অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করে এবং বাস করে তাদের শীতল অঞ্চলে বসবাসকারী সমবয়সীদের তুলনায় বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, যারা মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলিতে বাস করে তারা উত্তর ইউরোপের দেশগুলিতে বসবাসকারীদের তুলনায় অল্প বয়সে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছায়। আর এই বয়ঃসন্ধির উপর ভিত্তি করেই বিয়ের উপযুক্ত বয়স নির্ধারণ করা যেতে পারে।
তারপরও একজন ব্যক্তির সামগ্রিক পরিপক্কতা এবং ভালো বা মন্দ কোনটি তা বোঝার ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে তার বিয়ের বয়স ঠিক করা উচিত। তবে আমরা এখানে তাত্ত্বিক কিংবা দর্শনীয় আলোচনার থেকে ইসলামে বিয়ের বয়স কত তা জানার চেষ্টা করবো ইন শা আল্লাহ।
ইসলামে বিয়ের বয়স
যদি বলেন ইসলামে বিয়ের বয়স কত তবে বলতে হবে, ইসলাম একজন মুসলিমের জন্য এমন কোন বয়স নির্ধারণ করে দেয়নি যে যে বয়সে তাকে বিয়ে করতে হবে। হোক সে ছেলে, হোক বা সে মেয়ে! হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে, তাদের বিবাহ করা কর্তব্য। কেননা বিবাহ দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী, যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন রোজা পালন করে। কেননা রোজা হচ্ছে যৌবনকে দমন করার মাধ্যম।”- বুখারী ৫০৬৫; মুসলিম ১৪০০
উপরক্ত হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, কোনো ব্যক্তি সামর্থ্যবান হলেই বিয়ে করে নেয়া উচিত। আর যেহেতু ব্যক্তি বিশেষে শক্তি সামর্থ্য ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে; অনেকে অল্প বয়সেই সামর্থ্যবান হয়ে যায়, আবার অনেকের একটু সময় লাগে। তাই যৌক্তিকতার দাবী হল, এর জন্য বয়স ঠিক না করা। এজন্য ইসলামে বিয়ের বয়স নির্ধারণ করা হয় নি।
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা -কে ছয় বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন এবং বিয়েটি নয় বছর বয়সে সুসম্পন্ন হয়েছিল।”- বুখারীঃ ৪৮৪০ এবং মুসলিমঃ ১৪২২
আগেই আমরা বলেছি যে, আরব অঞ্চল গুলোতে ছেলে কিংবা মেয়েরা সাধারনের তুলনায় দ্রুত পরিপক্ক হয়ে যায়। মূলত ভৌগলিক কারনেই এমনটা হয়ে থাকে। আর সে কারনেই হয়তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা -কে এত ছোট বয়ে বিয়ে করতে পেরেছিলেন।
বর্তমান যুগের ফিতনা অত্যন্ত ভয়াবহ হওয়ায় বিয়ে যত দ্রুত করা যায় ততই ভালো। আর বিয়ের বয়সের ব্যাপারে ইসলাম নির্দিষ্ট করে কিছু না বললেও সামর্থ্য থাকলে বিয়ে দ্রুত করার ব্যাপারে বরাবরই ইসলাম উৎসাহিত করে। তবে জেনে রাখা ভালো বাংলাদেশের আইন অনুসারে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ এবং ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১।
সবশেষে বিয়ে নিয়ে একটি হাদিস জেনে নিন,
ইমাম বুখারী (৫০৬৬) ও ইমাম মুসলিম (১৪০০) ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে কিছু যুবক ছিলাম যাদের কিছুই ছিল না। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা সামর্থ্য রাখ তাদের উচিত বিয়ে করে ফেলা। কেননা বিয়ে দৃষ্টি অবনতকারী ও লজ্জাস্থানকে হেফাযতকারী। আর যার সামর্থ্য নেই তার উচিত রোযা রাখা। কেননা রোযা যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী।”
Resources