আর্টিকেলটিতে যে সব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে...
ছোট ছোট পরিবর্তন আপনাকে রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করতে পারে। রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার উপায় হিসেবে শোবার ঘর ঠান্ডা রাখা, “৪-৭-৮ শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম” (ব্রেদিং এক্সারসাইজ) করা এবং শোবার আগে ফোন অথবা টেলিভিশনের স্ক্রিন এড়িয়ে চলা অন্যতম। আজকে আমরা এখানে রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার সেরা পাঁচ উপায় জানবো!
আরও পড়ুন রাতে ভালো ঘুমের সেরা পাঁচ উপায় |
দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার উপায়
ভালো ঘুম আমাদের শরীরকে প্রানবন্ত রাখতে, মস্তিষ্ককে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে করে। কিছু মানুষের ঘুমিয়ে পড়তে কোনই সমস্যা হয় না। কিন্তু এমন অনেকেই রয়েছে যাদের রাতে ঘুম আসতে অনেক সময় লেগে যায়। যার ফলে রাতে পরিমান মত ঘুমতে পারে না এবং ঘুম ঘুম ভাবে পরের দিনটা কেটে যায়। আপরিমত ঘুম আমাদের শরীর এবং মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মেজাজ খিটখিটে, আবেগ- অনুভূতি কমে যাওয়া, এবং জৈবিক চাহিদারও ঘাটতি হতে পারে (সোর্স) অপরিমিত ঘুমের ফলে। তাই দ্রুত ঘুমতে পারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই আলোকেই আমরা এখানে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার কার্যকরী পাঁচ উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি।
শরীরের তাপমাত্রা সহনীয় রাখুন
সাধারণত ঘুমিয়ে পড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা পরিবর্তিত হয়। আমরা যখন শুয়ে যাই তখন আমাদের শরীরের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে যায় এবং আমরা যখন ঘুম থেকে উঠি তখন শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে যায় (সোর্স)। আর ঘরের বা রুমের এই বাড়তি তাপমাত্রা দ্রুত ঘুম পাড়তে বাঁধা দিয়ে থাকে।
তাই শরীরের তাপমাত্রা কমাতে গোসল হতে পারে দ্রুত ঘুমতে যাওয়ার অন্যতম হাতিয়ার। গোসলের পর শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। ফলে আপনি বিছানায় শুয়ে গেলে আপনার মস্তিষ্কে এর সিগন্যাল চলে যাবে এবং আপনি দ্রুত ঘুমিয়ে পড়বেন (সোর্স)।
এক বিখ্যাত সাহিত্যে দেখা গেছে যে, “ঘুমানোর আগের গোসল ঘুমের গভীরতা এবং ঘুমের গুণমান বৃদ্ধি করতে পারে”।তাই তাড়াতাড়ি ঘুমতে যেতে চাইলে ঘুমানোর ১-২ ঘন্টা আগে গোসল করে নিতে পারেন।
তাছাড়া ঘরের তাপমাত্রা কমিয়েও শরীরের তাপমাত্রা সহনীয় অবস্থানে নিয়ে আসতে পারেন। যার জন্যে আপনার থার্মোস্ট্যাটকে ৬০-৬৭°F অথবা ১৫.৬-১৯.৪°C এর মধ্যে নিয়ে আসুন। তবে ব্যক্তি বিশেষে এই তাপমাত্রার রেঞ্জ কম বা বেশি হতে পারে।
“৪-৭-৮ শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম” (ব্রেদিং এক্সারসাইজ) করুন
৪-৭-৮ শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম / ব্রেদিং এক্সারসাইজ মূলত ইয়োগা অথবা যোগব্যায়াম থেকে এসেছে। এটি একটি শক্তিশালী ও কার্যকরী শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম যা আপনাকে নিরুদ্বেগ করতে সহায়তা করতে পারে এবং এই ব্যায়াম আপনাকে ঘুমানোর আগে শান্ত করতেও সাহায্য করতে পারে।
এই ব্যায়াম মানুষের স্নায়ুতন্ত্রকে শিথিল করতে সাহায্য করে। যখন আপনি কোন ধরনের চাপ বা উদ্বিগ্নতা অনুভব করবেন তখন এটি অনুশীলন করতে পারেন।
এই ব্যায়াম করার নিয়ম নিচে তুলে ধরা হল-
- প্রথমে আপনার জিহ্বার ডগা উপরের দাঁতের পিছনে রাখুন।
- “হুশ” শব্দের মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণরূপে শ্বাস ছাড়ুন।
- আপনার মুখ বন্ধ করুন, এবং মনে মনে ১ থেকে ৪ গণনা করুন। এই সময়টাতে নাক দিয়ে শ্বাস নিন।
- এরপর শ্বাস ধরে রাখুন, মনে মনে ১ থেকে ৭ গণনা করুন।
- সবশেষে আপনার মুখ খুলুন এবং সম্পূর্ণরূপে শ্বাস ছাড়ুন। শ্বাস ছাড়ার সময় একটি “হুশ” শব্দ করুন। এই ভাবে ১ থকে ৪ গণনা করুন।
এই চক্রটি অন্তত আরও তিনবার পুনরাবৃত্তি করুন। এই কৌশলটি আপনাকে শান্ত ও নিরুদ্বেগ করতে সহায়তা করতে পারে এবং দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করতে পারে।
একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমতে যান
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, প্রতিদিনের একটি নির্দিষ্ট ঘুমের সময়সূচী সহজে এবং দ্রুত ঘুমাতে সাহায্য করে।
মানুষের শরীরের একটি নিজস্ব নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা আছে যাকে “সার্কাডিয়ান রিদম” বলে। এই অভ্যন্তরীণ ঘড়িটি দিনের বেলা এক্টিভ থাকে কিন্তু রাতের বেলা আস্তে আস্তে ইনএক্টিভ / নিস্তেজ হয়ে যায় (সোর্স)।
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমতে গেলে এই “সার্কাডিয়ান রিদম” সঠিক ভাবে কাজ করবে, ফলে সহজে এবং দ্রুত ঘুমিয়ে পড়বেন। একবার আপনার ঘুমের সময়সূচী নির্দিষ্ট করে ফেলতে পারলে, দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া এবং পরিমানমত ঘুম পাড়া সহজ হয়ে যাবে (সোর্স)।
আপনার নির্ধারিত সময়ে বিছানায় শুতে যাওয়ার আগে নিজেকে অন্তত ৩০ মিনিট সময় দিন। এই সময়ে ৪-৭-৮ শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম” (ব্রেদিং এক্সারসাইজ) করুন এবং অন্তত বিশ আয়াত কুরআন তিলওয়াত করুন অথবা শুনুন। এটি আপনার শরীর এবং মনকে শিথিল করতে এবং ঘুমের জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে।
ব্যায়াম করুন
ব্যায়াম স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়। ব্যায়াম মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের উৎপাদন বাড়িয়ে এবং স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা কমিয়ে ঘুমের সময়কাল এবং গুণমান বাড়াতে সাহায্য করতে পারে (সোর্স)।
জেনে রাখা ভালো ব্যায়াম করার সময়টিও গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কখন ব্যায়াম করবেন তার উপর নির্ভর করবে আপনার রাতের ঘুম। আপনি যদি সকালে মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করেন তবে আপনার ঘুমের গুণমান বৃদ্ধি পাবে।
সকালে যেসব ব্যায়াম করতে পারেন-
- হাঁটা
- সাইকেল চালা
- টেনিস খেলা
বই পড়ুন
ঘুমানোর আগে বই পড়া আপনার দ্রুত ঘুমানোর জন্যে অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপায় হতে পারে। তবে মোবাইল অথবা ট্যাবে বই পড়া যাবে না।
কারন, ইলেকট্রনিক বই এক ধরনের নীল আলো নির্গত করে, যা মেলাটোনিন নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। মেলাটোনিনের মাত্রা কমে গেলে মানুষের ঘুমিয়ে পড়া কঠিন হয়ে যায় (সোর্স)। অতএব, দ্রুত ঘুমানোর জন্য বই এর হার্ড কপি পড়ার বিকল্প নেই।
কুরআন তিলওয়াত শুনুন
কুরআন তিলওয়াত ঘুমের মান উন্নত করতে এবং দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে সহায়তা করতে পারে। ভাল ঘুমের জন্য সূরা আর রহমান অথবা সূরা মূলক একটি দুর্দান্ত হাতিয়ার হতে পারে, কারণ এটি ঘুমিয়ে পড়তে আপনার যে সময় নেয় তা কমাতে পারে।
শেষ অবধি, যদি কুরআন তিলওয়াতেও দ্রুত ঘুম না আসে, তবে রুমের সকল জানলা-দরজা বন্ধ করে সমস্ত শব্দ কানে আসার পথ রুদ্ধ করে ঘুমের চেস্টা করতে পারেন। এই পদ্ধতি আপনাকে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে এবং নিরবচ্ছিন্ন ঘুম পাড়তে সহায়তা করতে পারে।
ঘুম বৃদ্ধির খাবার
ডায়েট এবং ঘুম দুটোই খুব জটিল বিষয়, কারন এমন কোনও সিলভার বুলেট বা একক খাবার নেই যা ঘুমের ক্ষেত্রে সাহায্য করার জন্য গ্যারান্টিযুক্ত। তবে, এমন কিছু খাবার এবং পানীয় রয়েছে যা রাতে দুর্দান্ত ঘুম পড়তে সহযোগিতা করতে পারে।
পুষ্টিবিদ এবং ঘুম বিশেষজ্ঞ সহ গবেষকরা ঘুমের জন্য সেরা খাবারগুলি আবিষ্কার করার জন্য বিভিন্ন ধরণের গবেষণা পরিচালনা করেছেন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে কিছু খাবার দ্রুত এবং ভালো ঘুমাতে বেশ ভালো ভূমিকা রাখছে। খাবার গুল হল-
- দুধ
- ডিম
- মিষ্টি আলু
- কলা
- মধু
- লেটুস পাতা
- আখরোট
- কাঠবাদাম
ভালো ঘুমের ওষুধ
Clonazepam, Diazepam দ্রুত ঘুমের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। শরীরকে তার ঘুম চক্র বজায় রাখতে এটি সাহায্য করে, যা সাধারণত জৈবিক ঘড়ি হিসাবে পরিচিত। Felfresh ও pase-2, Epinal, Zopiline, Lexyl এগুলো খেলে অল্প সময়ে ঘুম আসে। ঔষধ গুলো স্পর্শকাতর । আপনার বয়স ভেদে ডাক্তার আপনার জন্য ডোজ নির্ধারণ করে দিবেন কতটুকু খেতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত ঘুমের ওষুধ কখনই খাবেন না।