আপনি যদি মানসিক রোগে ভোগেন এবং তা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজেন তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য! যদিও অনেকে আপনাকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিবে, সাপোর্ট দিবে এবং এমনকি ভালবাসা দিয়েও পাশে থাকতে পারে তারপরও নিজেকে ভালো রাখতে, নিজের মানসিক অবস্থা ভালো করতে সব থেকে বেশী দায়িত্ব পালন করতে হবে আপনাকে নিজেকে। আপনার মানসিক সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক কার্যকরী পদক্ষেপ রয়েছে। নিয়মিত সেই পদক্ষেপ গুলি অনুসরণ করে, আপনি আপনার মানসিক স্থিতিশীলতা ফিরে পেতে পারেন এবং একটি সুস্থ জীবন যাপন করতে পারেন।
মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায়
এখানে পাঁচটি বাস্তব ও কার্যকরী উপায় বাতলানো হল যা আপনার মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
১) নিজেকে কখনো একা মনে করবেন না! জীবনে চলার পথে অনেক সমস্যাই আমাদের সামনে এসে থাকে। কখনো বড়, কখনোবা ছোট। সমস্যার যেন শেষই নেই! এই সমস্যা গুলোর মদ্ধে অনেকেই আপনাকে ভুল বুঝতে পারে, অনেকেই আবার ছেড়ে যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, দুনিয়াতে কেউ কারো জন্য নয়। কেউ ছেড়ে গেলেও ভেঙ্গে পড়া যাবে না, নিজেকে একলা ভাবা যাবে না। সব সময় মনে রাখতে হবে, “আমি আমার জন্য, শুধুমাত্র আমার জন্য”। আমাকে ভালো থাকতে হবে। নিজেকে ভালো রাখতে হবে।
২) নিয়মিত হাঁটা-চলা করা এবং ব্যায়াম করা। মন এবং শরীর পৃথক সত্তা নয়। নিয়মিত হাঁটা চলা এবং ব্যায়াম মানসিক সুস্থতার জন্য সেরা জিনিসগুলির মধ্যে একটি। নিয়মিত ব্যায়াম শরীর এবং মনকে চাঙ্গা রাখে। ব্যায়ামের অর্থ এই নয় যে সপ্তাহে চারবার জিমে গেলাম অথবা হাফ-ম্যারাথনে গেলাম! বরঞ্চ নিয়মিত দিনে মাত্র ২০ মিনিটের হাঁটা অথবা শারীরিক শ্রম আপনার মনকে পরিষ্কার করতে এবং অতিরিক্ত চাপকে দূর করতে সহায়তা করতে পারে।
৩) প্রতিদিন পরিমিত ঘুমের চেষ্টা করুন। ঘুম প্রায় সব প্রাণীর জন্য একটি সার্বজনীন প্রয়োজন। এটি মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার উপর একটি বিশাল প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন যে, পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে। এসবের মধ্যে স্মৃতিশক্তি উন্নত করা, মনোযোগ বৃদ্ধি করা এবং শেখার ক্ষমতা বাড়া অন্যতম। ব্যায়াম এবং সামাজিক যোগাযোগ আপনার মানসিক সমস্যা যতটা লাঘব হবে তার থেকে বেশী উপকার হবে ভালো এবং পরিমিত ঘুমের মাধ্যমে।
৪) মনের পাশাপাশি আপনার শরীরের দিকেও মনোযোগ দিন। মানসিক অসুস্থতা সব সময় শুধুমাত্র মাথা থেকে আসে তা কিন্তু নয়! আপনি যদি আপনার ত্বকে কোন ধরনের অস্বস্তি অনুভব করেন; আপনি যদি মানসিকভাবে ভঙ্গুর অনুভব করেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে৷ থাইরয়েডের ব্যাধি, হার্টের সমস্যা, এমনকি ভিটামিনের ঘাটতির কারনে মানসিক রোগের মতো উপসর্গ তৈরি হতে পারে। আপনার মানসিক সমস্যা আছে কিনা সেবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনি শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন কিনা তা নিশ্চিত হন। যদি দেখেন যে আপনি ক্লিনিকালি ভালো আছেন এবং মানসিক কষ্ট অনুভব করছেন, তাহলে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন।
৫) আপনার ডাক্তার যদি ওষুধের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তবে নির্ধারিত নিয়মে ওষুধ সেবন করুন। ওষুধ খালি পেটে বা খাবারের আগে বা পরে কখন খেতে হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত হন। যদি কোন ওষুধ সেবনের পর আপনার অস্বস্তিকর ভাব তৈরি হয়, তবে সে সম্পর্কে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। মনে রাখবেন, আপনি যদি সুস্থ হতে চান তবে আপনাকে ধীরে ধীরে ওষুধ সেবনের হার কমিয়ে নিয়ে আসতে হবে। হঠাৎ করে নয়! এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আপনাকে সহযোগিতা করতে পারে।
এছারাও, মানসিক সমস্যা থেকে বাঁচতে আল্লাহ তায়ালার কাছে বেশী বেশী দুয়া করতে পারেন, এবং নির্দিষ্ট কিছু আমলও করতে পারেন।
মানসিক রোগ থেকে মুক্তির আমল
মুসলমান হিসেবে আমরা জানি, এ পার্থিব জীবন একটি পরীক্ষামাত্র। আমরা বিশ্বাস করি- জীবনে চলার পথে কখনো কখনো আমাদেরকে চিন্তায় পড়তে হয়, ভাবতে হয়; তবে আমরা সবসময় চেষ্টা করি আমাদের এ চিন্তা যেনো আধিক্যের কারণে কখনো দুশ্চিন্তায় পরিণত না হয়। আর দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকার সর্বোত্তম উপায় হলো আল্লাহতায়ালার কাছে সাহায্য চাওয়া।
দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার দোয়া-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ ضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযু বিকা মিন দ্বালা’য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আপনার আশ্রয় চাই, অপারগতা ও অলসতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই আর ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকেও আপনার আশ্রয় চাই।
আরও পড়তে পারেন মানসিক রোগের ডাক্তার এর তালিকা |