আর্টিকেলটিতে যে সব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে...
মাইল্ড বা একিউট কেসের হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগীদের শরীরে হেপাটাইটিস বি খুব অল্প সময়ের জন্য স্থায়ী হয়ে থাকে। তাই এই কেসের রোগীদের হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা সবসময় প্রয়োজন হয় না। কিন্তু মাইল্ড কেস একটা সময় ক্রনিক কেসে পরিণত হয়ে যেতে পারে। যদি এটি ঘটে, তবে এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ক্ষত, লিভার ফেইলর এবং ক্যান্সারের মত রোগের কারণ হতে পারে। এমনকি এটি প্রাণঘাতীও হতে পারে। তাই হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত হলে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
বাংলাদেশে হেপাটাইটিস রোগটি জন্ডিস নামে বহুল পরচিত। সে কারণে এই রোগের আরেকটি নাম হল জন্ডিস! হেপাটাইটিস বি অথবা জন্ডিস এর চিকিৎসা জানতে পুরো লেখাটি পড়ার অনুরধ রইলো!
হেপাটাইটিস বি

“হেপাটাইটিস” মানে লিভারের প্রদাহ। আর লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করতে কয়েক ধরনের ভাইরাস মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম হল-
- হেপাটাইটিস A ভাইরাস
- হেপাটাইটিস B ভাইরাস
- হেপাটাইটিস C ভাইরাস
এই তিন ধরনের ভাইরাসের মধ্যে সব থেকে মারাত্মক ভাইরাস হল হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, ওপেন ঔউন্ড বা খোলা ঘা এবং শরীরের তরল পদার্থের সংস্পর্শে এলে এটি হয়।
এটি একটি গুরুতর রোগ। তবে আপনি যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকেন এবং এই অবস্থায় এ রোগে আক্রান্ত হন তবে এটি খুব দীর্ঘ সময় আপনার শরীরে স্থায়ী হওয়ার কথা নয়। আপনার শরীর কয়েক মাসের মধ্যে এই ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করে আপনার ইমিইউন সিস্টেম অথবা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে এই ভাইরাসের কার্যকারিতা নষ্ট করে দিবে। এবং আপনি আপনার বাকি জীবনের জন্য অনাক্রম্য হয়ে যাবেন! তার মানে আপনি আর এই ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হবেন না!
কিন্তু আপনি যদি জন্মগত ভাবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে এই রোগ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা একদমই নেই। সেক্ষেত্রে আপনার জন্মগত হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসার জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হবে। তবে যখনই হোক, আপনি যদি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই আপনি এর চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে ছুটে যেতে ভুলবেন না!
Related Articles এসিডিটি দূর করার উপায় গুলো ঝটপট জেনে নিন |
হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ
সাধারণত অ্যাঁকিউট হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগী এবং পাঁচ বছরের নিচের বয়সী বাচ্চারা এই রোগে আক্রান্ত হলে কোন লক্ষণ পাওয়া যায় না। তবে সাধারণত যে সব লক্ষণ পাওয়া যায়, তা হল…
- জ্বর আসা
- ত্বক বা চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া
- প্রস্রাব হলুদ হয়ে যাওয়া
- বাদামী বা কমলা রঙের পায়খানা হওয়া
- সপ্তাহ বা মাসব্যাপী শারীরিক ক্লান্তি অনুভব করা
- পেটের সমস্যা যেমন ক্ষুধা হ্রাস, বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া
- পেট ব্যথা হওয়া
- জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা হওয়া
বাংলাদেশের অনেক মানুষ এখনও এসব উপসর্গ নিয়ে কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। কবিরাজি চিকিৎসার একটা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি হলো হেপাটাইটিস A এবং E যথাযথ বিশ্রাম নিলেই সেরে যায়, কোন ওষুধ সেবন করতে হয় না। এ ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীরা সাধারণত ঝাড়-ফুঁক, ডাবের পানি পড়া অথবা শুধু পানি পড়া নিয়ে থাকেন এবং মনে করেন যে কবিরাজি চিকিৎসায় কাজ হয়েছে।
কিন্তু হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস রক্তে সংক্রমিত হলে লিভার সিরোসিস হতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত লিভার ক্যান্সার হয়ে মৃত্যুও হতে পারে। তাই বাংলাদেশের বিরাট জনগোষ্ঠীকে হেপাটাইটিস থেকে রক্ষা করতে ব্যাপকভাবে জনসচেতন প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এবং তাদের এটি দৃঢ় ভাবে জানান উচিত যে জন্ডিস অথবা হেপাটাইটিস বা হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসায় কবিরাজ নয় বরং ডাক্তারই সমাধান!
হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা
হেপাটাইটিস বি সাধারণত দুই রকমের হয়ে থাকে। একিউট হেপাটাইটিস বি এবং ক্রনিক হেপাটাইটিস বি। এখানে আমরা দুই হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসাই আপনাদের জানার সুবিদার্থে তুলে ধরলাম! তবে আপনাকে অবশ্যই পুর্নাঙ্গ চিকিৎসার জন্যে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিতে হবে।
একিউট হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা
বেশীরভাগ লোকের তেমন কোন অসুবিধাজনক উপসর্গ থাকে না, কিন্তু আপনি যদি অসুস্থ বোধ করেন তবে নিচের পরামর্শ গুলো অনুসরণ করতে পারেন :
- সম্পূর্ণ বিশ্রাম এর মধ্যে থাকুন
- খুব বেশী পেটে ব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শমতে পেট ব্যথার ওষুধ খেতে পারেন
- শীতল এবং ভাল বায়ুচলাচল করতে পারে এমন পরিবেশে থাকুন
- ঢিলেঢালা পোশাক পরুন
- চুলকানির সমস্যা হলে গরম পানি দিয়ে গোসল করা থেকে বিরত থাকুন
- খুব বেশী অসুস্থ বোধ করলে মেটোক্লোপ্রামাইড ওষুধ খেতে পারেন (অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শমতে)
- এবং চুলকানি কমানোর জন্য ক্লোরফেনামাইন খেতে পারেন। (অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শমতে)
বেশিরভাগ রোগী কয়েক মাসের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে যান। তবে আপনি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা তা জানার জন্য নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করুন।
ক্রনিক হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা
যদি রক্ত পরীক্ষায় দেখা যায় যে ৬ মাস পরেও আপনার হেপাটাইটিস বি আছে, তবে ডাক্তার হেপাটাইটিস বি-এর জটিলতার ঝুঁকি কমাতে ওষুধ এবং আপনার লিভারের হেলথ বা স্বাস্থ্যের অবস্থা দেখার জন্য নিয়মিত পরীক্ষা নিরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন।
ক্রনিক হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা তখনই দেয়া হয় যখন :
- আপনার ইমিউন সিস্টেম নিজেই হেপাটাইটিস বি ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হয়ে যায় এবং
- আপনার লিভারে যেকোন ধরনের জটিলতা ধরা পরে।
মূলত হেপাটাইটিস বি এর ওষুধগুলি সাধারণত ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে এবং লিভারের ক্ষতিসাধন বন্ধ করতে সাহায্য করে। দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি-এর প্রধান ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে পেগিন্টারফেরন আলফা ২-এ এবং অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ।
শেষ কথা
হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসায় পেগিন্টারফেরন আলফা 2 তখনই দেয়া হয় যখন লিভারের কার্যক্ষমতা ঠিক থাকে। এটি মূলত শরীরের ইমিইউন সিস্টেমের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসকে আক্রমণ করার চেষ্টা করে। এটি ইঞ্জেকশন আকারে সপ্তাহে ১ টি করে মোট ৪৮ সপ্তাহ দেয়া হয়।
আর যদি লিভারের কার্যক্ষমতায় কোন সমস্যা দেখা যায় তবে হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসায় অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেয়া হয়ে থাকে! আবার এমনও হতে পারে সুস্থ থাকার তাগিদে সারাটা জীবন হেপাটাইটিস বি এর ওষুধ সেবন করতে হতে পারে। তাই আপনার রক্তে হেপাটাইটিস বি ধরা পরলে অথবা হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ গুলো আপনার মধ্যে দেখা দিলে হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা’র জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।